ইসলামে মাজহাব উৎপত্তির কারণ: মাজহাব শব্দের অর্থ হলো চলার পথ, মতামত, বিশ্বাস, মতবাদ, পন্থা ইত্যাদি। ইসলামি
পরিভাষায় কোরআন-সুন্নাহ প্রদর্শিত, রাসুল (সা.), সাহাবায়ে কেরাম, তাবেয়ি ও মুজতাহিদদের মনোনীত পথের নামই হলো মাজহাব।
প্রিয় নবীর উম্মতের মধ্যে এমন কিছু পুণ্যবান ব্যক্তিকে মুজতাহিদ বলা হয়, যারা পবিত্র কোরআন, নবীজি (সা.) এর সুন্নাহ, সাহাবায়ে
কেরামদের ফতোয়া এবং পরবর্তী বিজ্ঞ আলেমদের ঐকমত্যের ওপর ভিত্তি করে সমস্যার সমাধান দিয়ে থাকেন।
এসব মুজতাহিদরা পবিত্র কোরআনে
একাধিক অর্থবোধক শব্দ থেকে সহজে পালনীয় অর্থটি নির্ধারণ করেন এবং কোরআন-সুন্নাহর মধ্যে বাহ্যিকভাবে বিপরীত ভাবাপন্ন
অর্থের মধ্যে সামঞ্জস্যতাপূর্ণ সমাধান বের করে থাকেন। যে সব বিষয়ে উম্মতের পুণ্যবান মুজতাহিদরা ঐকমত্য পোষণ করেছেন, এটিকে
শরিয়তের তৃতীয় উৎস ‘ইজমা’ বলা হয়। কোরআন, সুন্নাহ, ইজমার মধ্যে না পাওয়া নতুন নতুন সমস্যাগুলোকে নির্দিষ্ট মূলনীতির
আলোকে বিচারবুদ্ধি প্রয়োগ করে যে সমাধান দেওয়া হয়, তা হলো ‘কিয়াস’। উপরোক্ত মূলনীতিগুলোর আলোকে গবেষণার ফসল হিসেবে
নির্গত মাসআলাকেই বলা হয় ‘মাজহাব’। আর এই মাজহাবই হলো ইলমে ফিকাহ এর চর্চাকেন্দ্র। আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘যদি তোমরা না
জানো, তবে যারা জানে তাদের কাছ থেকে জেনে নাও।’ (সুরা নাহল-৪৩)।
বিভিন্ন মাজহাব উৎপত্তির কারণ : প্রিয় নবী রাসুলে করিম (সা.) এর নবুয়ত প্রকাশের পর থেকে ইন্তেকাল পর্যন্ত সময়টা ছিল পৃথিবীর
ইতিহাসে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য সময়। তখন মুসলমানদের মধ্যে কোনো সমস্যা উদ্ভব হলে তার সমাধান হিসেবে সরাসরি আল কোরআন
নাজিল হতো এবং স্বয়ং নবীজি (সা.) ওই আয়াতের বিস্তারিত ও খুঁটিনাটি বিশ্লেষণ করে এর হুকুম-আহকাম সম্পর্কে বর্ণনা দিতেন। আল্লাহ
তায়ালা বলেন, প্রেরণ করেছিলাম তাদেরকে প্রমাণাদি ও অবতীর্ণ গ্রন্থসহ এবং আপনার কাছে আমি স্মরণিকা অবতীর্ণ করেছি, যাতে
আপনি লোকদের সামনে ওইসব বিষয় বিবৃত করেন, যেগুলো তোমাদের প্রতি নাজিল করা হয়েছে, যাতে তারা চিন্তাভাবনা করে। (সুরা
নহল-৪৪)। খোলাফায়ে রাশেদীনের স্বর্ণযুগেও (৬৩২ খ্রিঃ-৬৬১ খ্রিঃ) স্বতন্ত্র মাজহাবের প্রয়োজন পড়েনি। কারণ তখন প্রিয় নবীর শীর্ষস্থানীয় সাহাবারা জীবিত ছিলেন।
খোলাফায়ে রাশেদার সময়ে: ইসলামে মাজহাব উৎপত্তির কারণ
সিরিয়া, মিশর, জর্দান, ইরাক ও পারস্য অঞ্চল ইসলামি সম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়। বিভিন্ন গোত্র, বর্ণ, সম্প্রদায়, অঞ্চলের মানুষ ইসলাম গ্রহণ
করেন। ওই এলাকাগুলোর মানুষের চিন্তাচেতনা ও দর্শনের ভিন্নতার কারণে ধর্ম অনুশীলনের ক্ষেত্রেও ভিন্নতা দেখা দেয়। এর ফলে
মুসলমানদের মধ্যে নানা মতপার্থক্য সৃষ্টি হয় এবং শেষ পর্যন্ত এই মতপার্থক্যই বিভিন্ন মাজহাবের উদ্ভব ঘটায়। ইসলামের চার খলিফার
যুগে তাদের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে গণ্য হতো এবং এটিকেই সবাই মেনে চলতেন। কিন্তু চতুর্থ খলিফা হযরত আলী (রা.) এর আমলে
ইসলামি সাম্রাজ্যের রাজধানী কুফায় স্থানান্তরিক হয়। ১০০ বছরব্যাপী উমাইয়া শাসনামলে বিভিন্ন গোলযোগ প্রায়ই লেগেই ছিল। এক
পর্যায়ে উমাইয়া খেলাফতের পতনের পর ১৩২ হিজরিতে আবুল আব্বাস খলিফা মনোনীত হলে আব্বাসীয় খেলাফতের গোড়াপত্তন হয়। আর এ যুগেই ‘ইলমে ফিকাহ’ একটি স্বতন্ত্র শাখা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়।
বিভিন্ন হুকুমের ধরন নিয়ে মতপার্থক্য :
ইজতিহাদি বিষয় নিয়ে বিভিন্নজনের মধ্যে ইখতিলাফ বা পার্থক্য থাকতে পারে। কেননা, নবীজি (সা.) বিভিন্ন সময় বিভিন্ন হুকুম-আহকাম
প্রদান করেছেন, তন্মধ্যে কোনোটি নির্দিষ্ট ব্যক্তি ও জনগোষ্ঠীর জন্য খাস আবার কোনোটি ছিল আম বা সাধারণ। এ ধরনের বিষয়বস্তু
নিয়েও মতপার্থক্যের কারণে বিভিন্ন মাজহাব সৃষ্টি হয়েছিল। যেমনÑ আহজাবের যুদ্ধ থেকে ফিরে আসার সময় নবীজি (সা.) সাহাবাদের
একটি দলকে বনি কুরাইজাতে এ বলে পাঠালেন যে, তোমাদের কেউই যেন বনি কুরাইজায় না পৌঁছা পর্যন্ত আসরের নামাজ না পড়ে।
ঘটনাক্রমে সেখানে পৌঁছতে দেরি হওয়ায় পথিমধ্যে আসরের সময় ঘনিয়ে আসে।
তখন একদল সাহাবা (নবীজির আদেশের প্রতি লক্ষ্য রেখে) বললেন,
আমরা বনি কুরাইজায় পৌঁছার আগে আসরের নামাজ আদায় করব না। আরেক দল সাহাবি (নবীজির আদেশের প্রতি লক্ষ্য রেখে)
বললেন, আমরা আসরের নামাজ রাস্তায় পড়ে নেব। কেননা নবীজি (সা.) আমাদের বোঝাতে চেয়েছেন, আমরা যেন অতি দ্রুত বনি
কুরাইজায় পৌঁছে যাই এবং আসরের নামাজ সেখানেই গিয়ে আদায় করি। কিন্তু আমাদের পৌঁছতে বিলম্ব হয়ে যায়। তাই আসরের নামাজ
কাজা করব না। পরে এ ঘটনা নবীজি (সা.) কে জানালে তিনি কোনো দলকেই তিরস্কার করেননি। (বোখারি-৩৮৩৫)।
হাদিসের ভিন্নতা : ইসলামে মাজহাব উৎপত্তির কারণ
প্রিয় নবীজি (সা.) এর সাহাবারা যখন কোনো কিছু জিজ্ঞাসা করতেন তখন নবীজি (সা.) তাদের প্রয়োজন অনুসারে সরলতা, দুর্বলতা ও
প্রয়োজনীয়তার আলোকে জবাব দিতেন। অর্থাৎ একই প্রশ্নের উত্তর ভিন্ন ভিন্নজনের জন্য ভিন্ন ভিন্নভাবে বলতেন। এরূপ ভিন্ন ভিন্ন
হাদিসের বর্ণনা মাজহাব সৃষ্টির রাস্তা সহজ করে দেয়। অনুরূপ সাহাবারা বিভিন্ন স্থানে গিয়ে নিজে যেভাবে শিখেছেন সেভাবেই দ্বীনি
তালিম দিতে লাগলেন। এতেও ভিন্নতা পরিলক্ষিত হয়। যেমন ইমাম মালেক (রহ.) থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি যখন ‘মুয়াত্তা’ সংকলন
করেন তখন খলিফা মনসুর প্রস্তাব করলেন, আপনি অনুমতি দিলে আমি প্রত্যেক অঞ্চলের গভর্র্নরের কাছে এ মর্মে চিঠি পাঠাব, সবাই
যেন আপনার এই কিতাবের হাদিস অনুযায়ী আমল করে এবং বিচার কাজ পরিচালনা করে। তখন ইমাম মালেক (রহ.) বলেন, রাসুলে
পাক (সা.) এই উম্মতকে নিয়ে জীবন অতিবাহিত করেছেন।
জিহাদের জন্য বাহিনী পাঠাতেন
এবং নিজেও শরিক হতেন। কিন্তু নবীজির জীবদ্দশায় বেশি দেশ বিজিত হয়নি। এরপর হজরত আবু বকর (রা.) খলিফা হলেন। তখনও
বিজিত অঞ্চলের সংখ্যা খুব বাড়েনি। হজরত ওমর (রা.) খলিফা হলে বহু দেশ ও অঞ্চল মুসলমানদের নিয়ন্ত্রণে আসে। ওসব অঞ্চলে দ্বীনি
তালিম দেওয়ার জন্য সাহাবায়ে কেরামরা দলে দলে ছুটে যেতেন। সেখানকার স্থানীয় জনগণ স্বীয় মুয়াল্লিম সাহাবি থেকে যা কিছু শিখেছেন
এবং শুনেছেন তার ওপরই আমল করতেন। এ নিয়ম পরবর্তী সময় পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। অতএব, এখন আপনি যদি লোকদের নিজ
অঞ্চলের আমল ছাড়া অজানা নতুন কোনো আমলের দিকে আহ্বান করেন তবে তারা এটিকে কুফরি মনে করবে। তাই আপনি প্রত্যেক
অঞ্চলে প্রচলিত ঈমান ও আমলের ওপর লোকদের ছেড়ে দিন। আর এই ইলম (মুয়াত্তা) নিজের জন্য গ্রহণ করতে পারেন। তখন খলিফা বললেন, আপনি দূরদর্শী কথা বললেন। (ইবনে সাদ, আত তাবকাতুল কুবরা)।
ইসলামের বিশ্বজনীন প্রেরণা মাজহাব সৃষ্টির অন্যতম কারণ :
ইসলাম একটি সর্বজনীন জীবনব্যবস্থা। প্রিয় নবীর সাহাবারা এ জীবন ব্যবস্থাকে পৃথিবীর নানা প্রান্তে ছড়িয়ে দিয়েছেন। হজরত আবদুল্লাহ
ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলেপাক (সা.) বলেছেন, আমার পক্ষ থেকে একটি মাত্র আয়াত হলেও তা মানুষের কাছে
পৌঁছে দাও। (তিরমিজি-২৬৬৯)। বিদায় হজের ভাষণে নবীজি (সা.) ঘোষণা দিয়েছেন ‘হে লোকসকল! তোমাদের প্রতিপালক এক।
তোমাদের আদিপিতা আদম এক। কোনো আরবের ওপর কোনো অনারবের শ্রেষ্ঠত্ব নেই, আর না আছে কোনো আরবের ওপর অনারবের শ্রেষ্ঠত্ব। কোনো কালোর ওপর কোনো সাদার শ্রেষ্ঠত্ব নেই, আর না আছে কোনো সাদার ওপর কালোর শ্রেষ্ঠত্ব, তবে তাকওয়া ছাড়া। (মুসনাদে আহমদ-২২৯৭৮)।
যার কারণে আমরা দেখতে পাই মুসলিম উম্মাহর কাছে সর্বজনীনভাবে গ্রহণযোগ্য হাদিসের মূল কিতাবগুলোর
বেশিরভাগই আরবের বাইরের বিশ্ববরেণ্য মুহাদ্দিসদের মাধ্যমে সংকলিত হয়েছে। যেমন, ইমাম বোখারি (রহ.)। জন্ম উজবেকিস্তানে,
ইমাম মুসলিমের (রহ.) জন্ম ইরানের নিশাপুরে, ইমাম নাসাঈ (রহ.) এর জন্ম তুর্কেমেনিস্তানে, ইমাম আবু দাউদ (রহ.) ইরানের সিজিস্তানে,
ইমাম তিরমিজির (রহ.) জন্ম উজবেকিস্তানে, ইমাম ইবনে মাজাহ (রহ.) জন্ম ইরাকের কাযভিনে, ইমাম বায়হাকির জন্ম ইরানের খোরামান
প্রদেশে, ইমাম দারাকুতনি বাগদাদের দার আল-কুতনে, ইমাম ইবনে হিব্বান আফগানিস্তানের সিস্তানে জন্মগ্রহণ করেন। এরই
ধারাবাহিকতায় সারা বিশ্বে স্বীকৃত চার মাজহাবের ইমামদের মধ্যে ইমাম মালেক (রহ.) ব্যতীত বাকি তিনজনই আরবের বাইরে জন্মগ্রহণ
করেছেন। যেমন, ইমাম আবু হানিফা (রহ.) কুফায়, ইমাম শাফেয়ি (রহ.) ফিলিস্তিনের গাজায়, ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহ.) বাগদাদ নগরীতে জন্মগ্রহণ করেন।
বিভিন্ন মাজহাবের মধ্যে উদারতার মনোভাব :
মাজহাবগত তারতম্যের কারণে সালাতের পদ্ধতির মধ্যে তারতম্য হতে পারে। কিন্তু তাদের মধ্যে কোনো ধরনের কাঁদা ছোড়াছুড়ি ছিল না;
বরং তাদের সব কামনা-বাসনা ছিল আল্লাহ ও তার রাসুল (সা.) এর সন্তুষ্টি অর্জন। তাদের একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ ছিল অনুসরণ
করার মতো। যেমন, ইমাম আবু হানিফা (রহ.) মদিনায় গেলে তার অনুসারীদের বলতেন মদিনার ইমাম মালেক (রহ.) এর মতো করে
সালাত আদায় করতে। অন্যদিকে ইমাম মালেক (রহ.) তার অনুসারীদের বলে দিয়েছেন, এখানে ইমামে আজম এসেছেন সবাই তার
মাজহাব অনুসারে সালাত আদায় করতে। ফলে দেখা গেল মালেকি মাজহাব মতে হানাফিরা আর হানাফি মাজহাব মতে মালেকিরা সালাত আদায় করলেন।
ইমাম শাফেয়ি (রহ.) কোনো জটিল বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণে অক্ষম হলে ইমাম আবু হানিফার কবর জেয়ারত করতে যেতেন এবং সেখানে
গিয়ে দুই রাকাত সালাত আদায় করতেন। তাও আবার নিজের মাজহাব ত্যাগ করে হানাফি মাজহাব অনুসরণ করে। ইমামদের মধ্যে কেউ কেউ হাদিসকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন আবার কেউ ইজমা-কিয়াসকে গুরুত্ব দিয়েছেন বেশি। দলিল হিসেবে হাদিস গ্রহণের ক্ষেত্রেও ভিন্ন ভিন্ন নীতি অবলম্বন করেছিলেন। ফলে ভিন্ন ভিন্ন মাজহাব তৈরি হয়েছে।
উপমহাদেশে মাজহাবের বিকাশ ও প্রভাব :
‘দুররুল মুখতার’ এর হাশিয়ায় আল্লামা আহমদ মিশরি লিখেছেন, ‘যে ব্যক্তি অধিকাংশ আলেম, ফিকাহবিদ ও সাওয়াদে আজম থেকে
পৃথক হবে, সে একাকী হয়ে গেল, যা তাকে জাহান্নামে প্রবেশ করাবে। অতএব, হে মোমিনরা! তোমাদের ওপর নাজাতপ্রাপ্ত দল আহলে
সুন্নাত ওয়াল জামাতের অনুসরণ করা অপরিহার্য। কেননা তাদের অনুসরণের মধ্যে আল্লাহর সাহায্য, হেফাজত, তার তৌফিক নির্ভরশীল।
আল্লাহর পক্ষ থেকে বঞ্চিত হওয়া, পরিত্যাজ্য হওয়া নির্ভর করে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের বিপরীত করার ওপর। আর এ নাজাতপ্রাপ্ত
দল বর্তমানে তার মাজহাবের অন্তর্ভুক্ত। তারা হলেন হানাফি, মালেকি, শাফেয়ি ও হাম্বলি। আল্লাহ তায়লা তাদের ওপর রহম করুন। এ যুগে
যারা এ চার মাজহাবের বাইরে, তারা বিদআতি ও জাহান্নামি।’ মুফতি আমিমুল ইহসান (রহ.) বলেন, মাজাহিবুল ইসলাম বা ইসলামে
মাজহাব হলো চারটি। (১) হানাফি (২) শাফেয়ি (৩) হাম্বলি ও (৪) মালেকি (তাবকাতুল ফিকহিয়্যাহ)।
ভারতীয় উপমহাদেশের মধ্যে হানাফি মাজহাবের সংখ্যাধিক্য। আবার শ্রীলঙ্কায় শাফেয়ি মাজহাব, মক্কা-মদিনায় মালেকি মাজহাব
অনুসরণকারীর সংখ্যা অধিক। তার কারণ হলো, এলকায় যে মাজহাবের অনুসরাীরা এসে ইসলাম প্রচার করেছিল, মানুষ তাদের মতামত
গ্রহণ করেছিল এবং সে অনুসারে আমল করেছিল। ভারতীয় উপমহাদেশে ইসলাম প্রচার করতে আসা সুফি-সাধকরা সবাই হানাফি মাজহাবের অনুসারী ছিলেন। ফলে এখানকার মানুষ হানাফি মাজহাবকে অনুসরণ করে থাকে।
মাজহাব হলো কোরআন সুন্নাহর বাস্তব প্রয়োগ ক্ষেত্র : ইসলামে মাজহাব উৎপত্তির কারণ
নবীজি (সা.) কে দেখে সাহাবারা আমল করতেন। আর সাহাবাদেরকে দেখে দেখে তাবেয়িরা তাদের জীবন পরিচালনা করতেন। এভাবে
কোরআন-সুন্নাহর বিধানগুলো এক প্রজন্ম থেকে অপর প্রজন্মে নিরবচ্ছিন্নভাবে এসে পৌঁছেছে। মাজহাবের ইমাম তাদের ইজতিহাদের
মাধ্যমে সেই আমলগুলোকে সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও লেখনীর মাধ্যমে পরবর্তীদের মাঝে বিতরণ করেছেন। এ জন্য মাজহাবের নাম তাদের
ইমামদের নামানুসারে হানাফি, শাফেয়ি, মালেকি, হাম্বলি বলা হয়ে থাকে। তার মানে এই নয় যে, মাজহাবের আমলগুলো তাদের হাতেই
সৃষ্ট; বরং যে আমলগুলো প্রিয় নবীজি (সা.) করেছেন, সাহাবারা করেছেনÑ সেই আমলগুলোকে সুবিন্যস্তভাবে সংরক্ষণ করে আরও
ব্যাপক বিশ্লেষণ করে সহজ পদ্ধতিতে মুসলিম উম্মতের কাছে উপস্থাপন করেছেন।
যেভাবে ইলমে হাদিসের ইমামরা প্রিয় নবীর হাদিসগুলো সংগ্রহ করে গ্রন্থাকারে লিপিবদ্ধ করেছেন
। যেমন, ইমাম বোখারির (রহ.) সংকলনকে বোখারি, ইমাম মুসলিম (রহ.) এর সংকলনকে মুসলিম, ইমাম তিরমিজির (রহ.) সংকলনকে
তিরমিজি শরিফ, ইমাম নাসায়ি (রা.) এর সংকলনকে নাসায়ি শরিফ ইত্যাদি প্রতিটি হাদিসের কিতাব তার সংকলকের নামানুসারে
পরিচিত। যদিও এগুলোর প্রতিটি গ্রন্থেই প্রিয় নবীজির হাদিস সংরক্ষিত ও সংকলিত হয়েছে। তাই শত শত বছর ধরে বিশ্বব্যাপী আলেম
-ওলামাদের কাছে সমাদৃত হলো নিজের আমলি জিন্দেগিতে কোনো একটি মাজহাবকে অনুসরণ করে চলা। পূর্ব যুগের বিজ্ঞ আলেমরা
নিজেরা ইজতিহাদ করার যোগ্যতা রাখলেও তারা তা না করে এ চার মাজহাব থেকেই একটিকে বেছে নিয়েছিলেন।
লেখক : মুহাম্মদ মুনিরুল হাছান
সিনিয়র শিক্ষক (ইসলাম শিক্ষা)
চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুল ও কলেজ