বাঙালি জাতিসত্তার পরিচয় বাংলা ভাষাভাষী জনগোষ্ঠী যে বৃহত্তর অঞ্চলে বসবাস করে তার নাম বাংলাদেশ বা বঙ্গপ্রদেশ।
কিন্তু প্রাচীন ভারতে বাংলাদেশ বলে কোনো রাষ্ট্র বা প্রদেশ ছিল না; তার নাম ছিল কেবল ‘বঙ্গ’ যা পরবর্তীকালে ‘বঙ্গদেশ’ আখ্যা পায়।
বস্তুতঃ
বাংলার প্রাচীন নাম যাই হোক না কেন সেই নামটির দেশবাচক অথবা জাতিবাচক পরিচয়ের সঙ্গে ভারতবর্ষে তথা বঙ্গদেশে আর্যসভ্যতা ও
আর্যসংস্কৃতির প্রসারের ইতিহাস জড়িয়ে আছে। আনুমানিক খ্রীঃ পূঃ আড়াই হাজার অব্দে এশিয়া ও ইউরোপের মধ্যবর্তী ভূমধ্যসাগরীয়
অঞ্চলের সমভাষাভাষী একটি জাতির আগমন ঘটে ভারতবর্ষে। ঐ জাতির সাধারণ পরিচয় আর্যজাতি। আর্যগণ যাযাবর জাতি হলেও তাঁরা
ছিলেন সমুন্নত ভাষা ও সংস্কৃতির অধিকারী। আর্যজাতি ও আর্যভাষা সম্প্রদায়ের ভারতবর্ষে আগমনের আগে গিরি- অরণ্য-নদ-নদী
পরিবেষ্টিত এ দেশে যাঁরা বসবাস করতেন তাঁরা আদিবাসী ও উপজাতি বা জনজাতি নামে পরিচিত ছিলেন।
আর্যের
ঐ সকল অধিবাসীও বিভিন্ন জাতি-সম্প্রদায়ে বিভক্ত ছিলেন। এঁদেরই কোনো কোনো সম্প্রদায়কে বৈদিক ও উত্তর বৈদিক যুগে ‘অসুর’,
‘রাক্ষস’, ‘নিষাদ’ প্রভৃতি নামে চিহ্নিত করা হয়েছিল। বর্তমান ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা অস্ট্রিক বা কোল বংশ-সমুদ্ভুত
সাঁওতাল-মুণ্ডা-শবর-পুলিন্দ-হো-কুর্ক-ডোম-চণ্ডাল প্রভৃতি জনজাতি- সম্প্রদায় তাঁদের উত্তর পুরুষ। এদের মধ্যে ডোম ও চণ্ডাল সম্প্রদায়
অন্ত্যজ হলেও আর্য ভাষাতেই কথাবার্তা বলতেন। বাংলা ভাষাভাষী জনগোষ্ঠী যে বৃহত্তর অঞ্চলে বসবাস করে তার নাম বাংলাদেশ বা বঙ্গপ্রদেশ।
প্রাচীনকালে : বাঙালি জাতিসত্তার পরিচয়
কেবল বঙ্গ যা পরবর্তীকালে ‘বঙ্গদেশ’ আখ্যা পায়। আনুমানিক খ্রীঃ পূর্ব আড়াই হাজার অব্দে আর্যজাতির আগমন ঘটে ভারতবর্ষে।
আর্যজাতি ভারতবর্ষে আগমনের আগে, এদেশে যাঁরা বসবাস করতেন তারা আদিবাসী ও উপজাতি নামে পরিচিত ছিলেন। বাংলাদেশের ও
বাঙালি জাতির প্রাচীন ইতিহাস ভারতবর্ষের আর্থীকরণ প্রক্রিয়ার সঙ্গে বিশেষভাবে জড়িত। বাংলা দেশের ও বাঙালি জাতির প্রাচীন
ইতিহাস ভারতবর্ষের আর্থীকরণ প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত। সম্প্রসারণশীল আর্য জাতি ভারতে প্রবেশের পর প্রথমে সিন্ধু-কাশ্মীর-গান্ধার প্রভৃতি অঞ্চলে বসতিস্থাপন করে।
অতঃপর পাঞ্জাবের: বাঙালি জাতিসত্তার পরিচয়
দুই পবিত্র নদী সরস্বতী ও দূষদ্বতীর মধ্যবর্তী ‘ব্রহ্মাবর্ত’ নামক ভূভাগে আর্যনিবাস গড়ে উঠেছিল। ব্রহ্মাবর্ত দেবনির্মিত জনপদ রূপে বন্দিত
হত। এখান থেকেই ভারতে আর্যভাষা ও সংস্কৃতির প্রচার ও প্রসার শুরু হয়। এই অভিযান চলতেই থাকে যার ফলে কুরুক্ষেত্র-মৎস্য-
পাঞ্চাল-শূরসেন প্রভৃতি ‘ব্রহ্মর্ষি’ দেশের অন্তর্ভুক্ত জনপদগুলি আর্য সংস্কৃতির অধীনে আসে। এই ভাবে উত্তরে হিমালয় থেকে দক্ষিণে
বিন্ধ্যপর্বত এবং পূর্বে পূর্বসমুদ্র থেকে পশ্চিমে পশ্চিমসমুদ্র পর্যন্ত বিস্তীর্ণ ভূভাগ আর্য সভ্যতা ও সংস্কৃতির ছায়ায় এসে বৃহত্তর ‘আর্যাবর্ত’ বা
আর্য সংস্কৃতিভুক্ত অঞ্চল গঠন করে। দেবভাষা সংস্কৃতের অনুশীলন এবং বেদবিহিত অনুশাসন মেনে চলা-আর্যসংস্কৃতির দুটি মূল বিষয়।