ডায়াবেটিসকে অবহেলা করা ঠিক না: ডায়াবেটিস যে একটি অসুখ সে সম্পর্কে বাংলাদেশের সিংহভাগ সাধারণ মানুষের ধারণাই নেই। দেশে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত
ব্যক্তিদের সঠিক সংখ্যা এখনও অজানা। অন্য রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতাল বা
ক্লিনিকে এলে চিকিৎসকদের পরামর্শপত্র অনুযায়ী স্বাস্থ্য পরীক্ষা করার সময় সিংহভাগ মানুষ পরিচিত হন এই রোগের সঙ্গে, জানতে
পারেন যে তিনি ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত।
গবেষকরা বলছেন: ডায়াবেটিসকে অবহেলা
দেশের ৪৩ দশমিক পাঁচ শতাংশ রোগ শনাক্তকরণের বাইরে থেকে যাচ্ছে। অথচ দেশে ১০ শতাংশ মানুষের মৃত্যু হয় ডায়াবেটিসে।
‘নীরব ঘাতক’ এই আজীবনের অসুখ পুরো নিরাময় না হলেও প্রতিরোধযোগ্য বলে জানান বিশেষজ্ঞরা। সুস্থ থাকতে নিয়ন্ত্রিত ও স্বাস্থ্যকর
জীবনযাপনের পরামর্শ দেন তারা।
গত বছর প্রকাশিত ডায়াবেটিস চিকিৎসার জাতীয় নির্দেশিকা অনুযায়ী,
দেশে প্রায় এক কোটি ৩১ লাখ মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। ২০ থেকে ৮০ বছর বয়সী ১৪ দশমিক দুই শতাংশ মানুষ রোগটিতে ভুগছেন।
যদিও এটি পুরো চিত্র নয়, এর থেকে বেশি রোগীও ডায়াবেটিস আক্রান্ত হয়ে থাকতে পারেন। বাংলাদেশে এ অসুখে আক্রান্ত মানুষের
সংখ্যা বিশ্বে অষ্টম। বর্তমান ধারায় চলতে থাকলে ২০৪৫ সালে দেশে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা হবে দুই কোটি ২৩ লাখ। আর
বর্তমানে বিশ্বে ৮০ কোটি প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। আন্তর্জাতিক গবেষণা সাময়িকী ল্যানসেটের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য
জানানো হয়।
আন্তর্জাতিক ডায়াবেটিস ফেডারেশনের তথ্য অনুযায়ী
দেশের ৪৩ দশমিক পাঁচ শতাংশ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত মানুষের রোগ নির্ণয় হচ্ছে না। এই সংস্থার যে চিত্র, তাতে দেখা যায় রোগটি
বাংলাদেশে ঊর্ধ্বমুখী। দেশে ১০ শতাংশ মানুষের মৃত্যু হয় ডায়াবেটিসে।
এমন পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবার দেশেও পালিত হয় বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য ‘ডায়াবেটিস: সুস্বাস্থ্যই হোক
আমাদের অঙ্গীকার’। দিবসটি উপলক্ষে বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতিসহ বিভিন্ন সংস্থা নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। সারা দেশের
ডায়াবেটিস হাসপাতালগুলোতেও দিবসটি গুরুত্ব দিয়ে পালিত হয়।
বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতি জানিয়েছে,
বাংলাদেশে গর্ভকালীন ডায়াবেটিসের হার ছয় থেকে ১৪ শতাংশ। এ ছাড়া, গর্ভকালীন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত নারীদের টাইপ–২ ডায়াবেটিসে
আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি, প্রায় ৫০ শতাংশ। গর্ভকালে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হলে শিশুদেরও আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে
দেশের লাখ লাখ ডায়াবেটিক রোগীর আস্থার বড় ঠিকানা বারডেম হাসপাতাল। এই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ডায়াবেটিস রোগ
নিয়ন্ত্রণ না করলে কিডনি, চোখ, হৃৎপিণ্ড ও পা মারাত্মকভাবে আক্রান্ত হয়। প্রতিদিন তিন হাজারের বেশি রোগী হাসপাতালটির বহির্বিভাগে চিকিৎসা নেন।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে
নিয়মিত ব্যায়াম করা, সুষম খাদ্য খাওয়া, চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নিয়মিত ওষুধ ও ইনসুলিন গ্রহণ করা ও সুশৃঙ্খল জীবনযাপন
করার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা।
ডায়াবেটিক সমিতির সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক এ কে আজাদ খান বলেন, ‘অতিরিক্ত ফাস্টফুড ও চর্বিযুক্ত খাবার খেলে, শারীরিক
পরিশ্রম ও নিয়মিত শরীরচর্চা না করলে ও মাত্রাতিরিক্ত ওজন বেড়ে গেলে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বেড়ে যায়।’
তিনি বলেন, ‘ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না থাকলে হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক, কিডনি ফেইলিওর, অন্ধত্ব ও অঙ্গচ্ছেদের মতো মারাত্মক এবং প্রাণঘাতী ঝুঁকি থাকে।’
বিশ্বে ৮০ কোটি প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত : ডায়াবেটিসকে অবহেলা
বিশ্বে ৮০ কোটির বেশি প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত, যা আগের পরিসংখ্যানের চেয়ে দ্বিগুণ। ৩০ বছরের বেশি বয়সিদের মধ্যে
অর্ধেকেরও বেশি রয়েছেন যারা চিকিৎসা পাচ্ছেন না। সারা বিশ্বেই ানেকে আবার জানেন না যে তিনি ডায়াবেটিসে ভুগছেন।
ল্যানসেটে প্রকাশিত গবেষণায় দেখা যায়, ২০২২ সালে ১৮ বা তার চেয়ে বেশি বয়স এমন ৮২ কোটি ৮০ লাখ মানুষ টাইপ ১ ও টাইপ ২
ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ছিলেন। এ সময় যাদের বয়স ৩০ বছরের বেশি ছিল তাদের মধ্যে ৫৯ শতাংশ চিকিৎসা পাচ্ছেন না বলেও জানানো হয়।
এর আগে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা প্রায় ৪২ কোটি ২০ লাখ ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগীর কথা জানায়। গবেষণায় দেখা গেছে, ১৯৯০ সালের পর
বিশ্বে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। এক্ষেত্রে অধিকাংশ রোগীই মধ্য ও নিম্ন আয়ের দেশের মানুষ।
এসব দেশে রোগীর সংখ্যা বাড়লেও চিকিৎসা সেবা বাড়েনি। যদিও ধনী দেশে রয়েছে এর উল্টো চিত্র।