বাংলা দেশের পরিচয় মৌর্যযুগের (খ্রীঃ পূঃ ৩য় শতক) আগে পর্যন্ত সুদীর্ঘকাল বাংলা দেশ আর্যসংস্কৃতির সংস্পর্শ থেকে দূরে ছিল।
মৌর্যযুগ থেকেই এ দেশে আর্থীকরণ শুরু হয় এবং গুপ্ত যুগে হর্ষবর্ধন শিলাদিত্যের রাজত্বকালে (খ্রীঃ ৭ম শতক) প্রায় সমগ্র বাংলা দেশ
আর্যসভ্যতা ও সংস্কৃতির অধিকারে আসে। মনুসংহিতানুসারে ‘ম্লেচ্ছ দেশস্ততোহন্যতঃ’ বলতে আর্যসংস্কার-বহির্ভূত দেশগুলিকেই বোঝানো হয়েছে।
মৎস্য’
মনে হয় ‘ম্লেচ্ছ’ এই প্রাকৃত শব্দটি ‘মৎস্য’ শব্দেরই অপভ্রষ্ট রূপ (সংস্কৃত মৎস্য প্রা. মচ্ছ (মাগ. মৌর্যযুগ থেকেই এ দেশে আর্থীকরণ প্রা মশ্চ > ম্লচ্ছ > ম্লেচ্ছ)। সুতরাং ম্লেচ্ছ শব্দে অবৈদিক অনাচারী ‘মছলি খানেওয়ালা’ বাঙালি পূর্বপুরুষদের প্রতি কটাক্ষের সংকেত আছে বলে আমাদের ধারণা। সেই কটাক্ষ তীক্ষ্ণ-তীব্র হয়ে কখনো কখনো শিষ্টতার মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। বোধায়ন ধর্মসূত্রের একটি শ্লোকে বলা হয়েছে-“অঙ্গ বঙ্গ কলিঙ্গেযু সৌরাষ্ট্র মগধেষু চ। তীর্থযাত্রাং বিনা গচ্ছন্ পুনঃসংস্কারমর্হতি।”-অর্থাৎ অঙ্গ, বঙ্গ, কলিঙ্গ, সৌরাষ্ট্র এবং মগধ-আর্যসংস্কৃতি বহির্ভূত এই সকল দেশে কোনো কাজে গেলে ফিরে এসে প্রায়শ্চিত্ত করতে হবে।
আর্য সংস্কারক
এই বিধান থেকে স্পষ্ট হয় ম্লেচ্ছদের প্রতি আর্য সংস্কারক ও শাস্ত্রপ্রণেতাদের অবজ্ঞার মাত্রা। দুঃখের বিষয়, উল্লিখিত দেশ গুলির মধ্যে
সৌরাষ্ট্র (বর্তমান গুজরাটের অন্তর্গত সুরাট অঞ্চল) এবং মগধের কিয়দংশ বাদে বাকি অঞ্চলগুলির প্রায় সবই সুপ্রাচীন কালের বৃহত্তর
বঙ্গের অন্তর্ভুক্ত। তবুও অনুমান করতে বাধা নেই যে পূর্বোল্লিখিত বৈদিক সংস্কার-বহির্ভূত অচ্ছুৎ-অন্ত্যজদের ঐ সকল দেশেও আর্য
অভিযান অব্যাহত ছিল এবং গুপ্তযুগের আগেই সেখানে কিছু কিছু আর্যনিবাস ও আর্যসংস্কৃতিপুষ্ট তীর্থস্থান গড়ে উঠেছিল।
গুপ্তযুগে: বাংলা দেশের পরিচয়
তা না হলে কেবল শুরু হয় এবং গুপ্তযুগে সমগ্র বাংলাদেশ আর্যসভ্যতা ও সংস্কৃতির অধিকারে আসে। ‘ম্লেচ্ছ’ এই প্রাকৃত শব্দটি ‘মৎস্য’
শব্দেরই অপভ্রষ্ট রূপ। ‘বঙ্গ’ শব্দের প্রথম ব্যবহার লক্ষ্য করা যায় পতঞ্জলির মহাভাষ্যে। পতঞ্জলি অঙ্গ, বঙ্গ ও সুক্ষ এই তিনটি বিভাগ
উল্লেখ করেছেন। ‘অঙ্গ’ দেশের বেশির ভাগ অংশ বর্তমান বিহারের অর্ন্তভুক্ত, ক্ষুদ্রাংশটুকু পড়েছে বাংলায়। ‘বঙ্গ’ শব্দের অর্থ নিম্ন
জলাভূমি। সুতরাং বঙ্গদেশ বলতে অবিভক্ত বাংলার জলময় অঞ্চলগুলিকে বোঝাতো।
‘সুহ্ম’ বীরভূমের
উত্তরাংশ বাদে, বর্তমান বর্ধমান বিভাগ এর অন্তর্ভুক্ত। মাত্র ব্যবসায়িক বা বাণিজ্যিক কারণে আর্যবংশজগণ ঐ সকল দেশে আসতেন এবং
প্রায়শ্চিত্তের কঠোর বিধান মেনে নিতেন বলে মনে হয় না। একটি ভূখণ্ড বা বিভাগ হিসেবে ‘বঙ্গ’ শব্দের প্রথম ব্যবহার লক্ষ্য করা যায় পতঞ্জলির মহাভাষ্যে (খ্রীঃ পূঃ ২য় শতক)।
পতঞ্জলি অঙ্গ, বঙ্গ ও সুহ্ম-এই তিনটি বিভাগের উল্লেখ করেছিলেন
অঙ্গদেশের বেশির ভাগ অংশ বর্তমান বিহারের অন্তর্ভুক্ত, ক্ষুদ্রাংশটুকু পড়েছে বাংলায়। বর্তমান মালদহ, মুর্শিদাবাদ, পশ্চিম দিনাজপুর ও
বীরভূম জেলা প্রাচীন ‘অঙ্গ’ দেশের অঙ্গীভূত ছিল। ‘বঙ্গ’ শব্দের অর্থ নিম্ন জলাভূমি। সুতরাং বঙ্গদেশ বলতে অবিভক্ত বাংলার জলময়
অঞ্চলগুলিকে বোঝাতো। ‘সুক্ষ’ বীরভূমের উত্তরাংশ বাদে বর্তমান বর্ধমান বিভাগ। রঘুবংশ মহাকাব্যে রঘুর দিগ্বিজয় প্রসঙ্গে কালিদাস
সুক্ষ, বঙ্গ, ও কামরূপ অঞ্চলের উল্লেখ করেছেন। এর মধ্যে বঙ্গ হ’ল বর্তমান বাংলা দেশের অন্তর্ভুক্ত যশোর-খুলনা-ফরিদপুর-ঢাকা ও ময়মনসিংহ জেলা এবং অবিভক্ত সুন্দরবন অঞ্চল।
বাংলার উত্তরপূর্ব অঞ্চল পরিচিত ছিল ‘সমতট’ নামে
এর মধ্যে পড়তো ত্রিপুরা, চট্টগ্রাম (সিলেট) ও নোয়াখালি অঞ্চল। উত্তর ও উত্তর-মধ্য বঙ্গকে বলা হ’ত ‘পুণ্ড্রবর্ধন’। গঙ্গার দক্ষিণ তীর পর্যন্ত ভূভাগ ছিল পুণ্ড্রবর্ধনের সীমানা। গঙ্গার উত্তর প্রান্তস্থ অঞ্চলকে বলা হ’ত ‘বরেন্দ্র’ বা ‘বরেন্দ্রী’। বর্তমান পশ্চিমবঙ্গের বেশিরভাগ অঞ্চল ‘সুদ্ধ’ বিভাগের মধ্যে পড়েছে। বস্তুত পশ্চিম বাংলার প্রাচীন নাম পশ্চিমবঙ্গের বেশিরভাগ অঞ্চল ‘সুক্ষ’ বিভাগের মধ্যে পড়েছে। খ্রীষ্টিয় নবম দশম শতক থেকেরাঢ় নাম চালু হয়। রাঢ়অঞ্চল আবার দুই অংশে বিভক্ত উত্তরাঢ় ও দক্ষিশ রাঢ়। ‘রাঢ়’ শব্দটি জাতিবাচক নয়, গুণবাচক। বঙ্গদেশের অধিবাসী বঙ্গাল > সেইঅধিবাসীদের ভাষা বঙ্গালী বাঙ্গালা > আধুনিক বাংলা বা বাঙলা শব্দের উৎপত্তি। প্রাচীন বাংলার আর একটি অর্থবহ নাম ছিল ‘গৌড়’।
রামমোহন থেকে রবীন্দ্রনাথ পর্যন্ত ‘গৌড়’ শব্দটিকে ‘বঙ্গ’ শব্দের সমান্তরাল ও সমর্থিক বলে মনে করতেন
সুহ্ম হলেও খ্রীষ্টিয় নবম-দশম শতক থেকে সেই নাম পরিবর্তিত হয়ে ‘রাঢ়’ নাম চালু হয়। রাঢ় অঞ্চল আবার দুই অংশে বিভক্ত-উত্তর রাঢ় ও
দক্ষিণ রাঢ়। রাঢ়ের পরিচিতি প্রসঙ্গে বাংলা সাহিত্যের ঐতিহাসিকের মন্তব্য প্রণিধানযোগ্য- “অজয় ও দামোদরের উত্তরে উত্তর রাঢ়,
অজয়ের পূর্বে ও দামোদরের দুই পাশে, দক্ষিণে ও পূর্বে দক্ষিণ রাঢ়। (সেকালে দামোদর ত্রিবেণী-কালনার মাঝামাঝি স্থানে গঙ্গায় গিয়া
পড়িত।) পঞ্চদশ- ষোড়শ শতাব্দ হইতে শুধু রাঢ় দেশ বলিলে উত্তর রাঢ়ই বুঝাইত। একাদশ-দ্বাদশ শতাব্দে উত্তর রাঢ়া এবং দক্ষিণ রাঢ়া
বর্ধমানভুক্তির অন্তর্গত দুই ‘মণ্ডল’ ছিল। গুপ্তরাজাদের শাসনকালে তাঁহাদের অধিকৃত উত্তর- মধ্য-দক্ষিণ ও পশ্চিম বঙ্গ দুইটি ‘ভুক্তি’ তে (অর্থাৎ রাজস্ব-সংগ্রহ ভূখণ্ডে) বিভক্ত ছিল।
মোটামুটিভাবে ভাগীরথীর উত্তর ও পূর্বতীরস্থ প্রদেশ ছিল পৌণ্ড্রবর্ধন ভুক্তির মধ্যে,
আর দক্ষিণ ও পশ্চিমতীরস্থ প্রদেশ ছিল বর্ধমান- ভুক্তির অন্তর্গত। সেন-রাজাদের আমলে বর্ধমানভুক্তির আয়তন কমিয়া যায় এবং ইহার
উত্তর-পশ্চিমাংশ লইয়া কঙ্কগ্রামভুক্তি এবং দক্ষিণ-পশ্চিমাংশ লইয়া দণ্ডভুক্তির সৃষ্টি হয়।” (বাঙ্গালা সাহিত্যের ইতিহাস (১ম খণ্ড- পূর্বার্ধ-
পৃ-২), ড. সুকুমার সেন)। ‘বঙ্গ’ নামটির অর্থোৎপত্তি নিয়ে পণ্ডিতগণের মধ্যে মতানৈক্য দেখা যায়। কারো কারো অনুমান, পদটি চীনীয়-
তিব্বতী গোষ্ঠীর শব্দসমুদ্ভব। গঙ্গা, হোয়াংহো, ইয়াংসিকিয়াং প্রভৃতি নদীবাচক শব্দের সঙ্গে বঙ্গ (বংগ) শব্দের ধ্বনিগত মিলটি বুঝিয়ে দেয়
জলাশয় ও জলময় ভূমির সঙ্গে তার সাদৃশ্য। ঋগ্বেদে ‘বঙ্গ’ শব্দের উল্লেখ নেই। ‘বঙ্গ’ শব্দের প্রথম পরিচয় মেলে ঐতরেয়-আরণ্যকে (২-১-১৫)। সেখানে বলা হয়েছে-তিনটি সৃষ্ট তির্যক প্রজাতি (পক্ষী) বিনষ্ট হয়েছিল।
এই তিনটি প্রজাতি হ’ল: বাংলা দেশের পরিচয়
যথাক্রমে ‘বঙ্গেরা’, ‘বগধেরা’ এবং ‘ইরপাদেরা’ বা ‘চেরপাদেরা’- “যা বৈ তা ইমাঃ প্রজাস্তিস্রো অত্যায়মায়ংস্তানীমানি বয়াংসি বঙ্গা বগধাশ্চেরপাদাঃ।” বাক্যটির ব্যঞ্জিত অর্থ থেকে পণ্ডিতদের অনুমান, যে তিনটি পক্ষী জাতি অর্থাৎ পক্ষীরূপ যাযাবর জাতির মানব সম্প্রদায় বিনষ্ট হয়েছিল তারা হ’ল আর্য অথবা অনার্য ভাষা-ভাষী বঙ্গেরা অর্থাৎ বঙ্গজাতীয় মানুষ, বগধেরা অর্থাৎ বগধ (আনুমানিক মগধ শব্দের পূর্বরূপ) জাতীয় মানুষ এবং চেরপাদ বা ইরপাদ জাতের মানব প্রজাতি। ভারতে দেশ নাম অধিকাংশ স্থলে জাতি নাম থেকে এসেছে। এই সূত্রে ‘বঙ্গে’ অর্থাৎ নিম্ন জলাভূমিতে বসবাসকারী জাতির বাসস্থান বঙ্গদেশ রূপে পরিচিত হয়েছিল বলে অনুমান। এমনি বগধ বা মগধ দেশের অধিবাসী মাগধ > ভাষা মাগধী, কিন্তু চেরপাদ বা ইরপাদের ‘কোনো সুসঙ্গত ব্যাখ্যা নাই’ বলে ভাষাচার্য ড. সুকুমার সেনের ধারণা। যাই হোক, বঙ্গ > বঙ্গাল (বঙ্গ আল) অথবা বঙ্গপাল (বঙ্গ পাল) শব্দ নিষ্পন্ন হয়েছে বলে মনে হয়।
বঙ্গপাল শব্দটির উল্লেখ পাওয়া যায় আনুমানিক খ্রীঃ প্রথম শতকে
উত্তর প্রদেশের কৌশাম্বীর নিকটে পভোসায় প্রাপ্ত একটি গুহালিপি থেকে জানা যায় যে অধিচ্ছত্রার রাজা ‘বঙ্গপাল’-এর পুত্র আষাঢ় সেন ঐ লিপি উৎসর্গ করেছিলেন। দ্বাদশ শতকের এক অনুশাসনে ‘বঙ্গালবল’ শব্দের উল্লেখ আছে। ‘বঙ্গালবল’ নালন্দার একটি বৌদ্ধবিহার ধ্বংস করেছিল। এই সময়ে ‘বঙ্গাল’ নামে এক কবি ছিলেন বলেও জানা যায়। বঙ্গদেশের অধিবাসী বঙ্গাল (বর্তমানে বাঙাল) > সেই অধিবাসীদের ভাষা বঙ্গালী বাঙ্গালা > আধুনিক বাংলা বা বাঙলা শব্দের উৎপত্তি। বাঙ্গালা বা বাংলার ইংরেজি উচ্চারণ Bengal (দেশবাচক) এবং Bengali (ভাববাচক)। ফরাসী বঙ্গালহ > পর্তুগীজ Bengala > ইংরেজি Bengal শব্দটি উৎপন্ন হয়েছে বলে পণ্ডিতদের অনুমান। অবশ্য পর্তুগীজ Bengala থেকেও বাংলা শব্দটি এসে থাকতে পারে। ঐতরেয-ব্রাহ্মণে (৭-১৮) পুণ্ড্র জাতির উল্লেখ আছে।
পুণ্ড্র জাতির বাসস্থান পুণ্ড্রবর্ধন: বাংলা দেশের পরিচয়
খ্রীঃ পূঃ তৃতীয় শতকের (অশোকের সমসাময়িক) একটি লিপিতে, ‘পুন্ড্রনগর’-এর উল্লেখ থেকে মনে হয়, এই পুণ্ড্রনগরেরই অর্বাচীন নাম
পুণ্ড্রবর্ধন। ‘সুদ্ধ’ শব্দের উল্লেখ আছে পতঞ্জলির মহাভাষ্যে (খ্রীঃ পূঃ ২য় ১ম শতক) এবং বৌদ্ধ ও জৈন ধর্মশাস্ত্রে (আয়ারঙ্গসুত্ত)। অষ্টম-
নবম শতক ও তার পরবর্তীকাল পর্যন্ত ‘সুক্ষ’ দেশ বলতে বর্তমান পশ্চিমবঙ্গকেই বোঝাতো। দণ্ডীর ‘দশকুমারচরিত’ অনুসারে
বাণিজ্যবন্দর ‘তাম্রলিপ্ত’ (বর্তমান তমলুক) বা ‘দামলিপ্ত’ নগর সুহ্ম দেশের অন্তর্ভুক্ত ছিল বলে জানা যায়। ‘রাঢ়’ শব্দটি জাতিবাচক নয়, গুণবাচক ও দেশবাচক।
উত্তর রাঢ়া ও দক্ষিণ রাঢ়ার কথা আগেই উল্লিখিত হয়েছে
।কৃষ্ণমিশ্রের ‘প্রবোধচন্দ্রোদয়’ নাটকের দ্বিতীয় অঙ্কে ‘রাঢ়াপুরী’র উল্লেখ এবং ‘দক্ষিণ রাঢ়ী ব্রাহ্মণদের কৌলীন্যগর্ব ও আচারশুচিতার প্রতি
কটাক্ষ আছে।’ নিন্দাত্মক অর্থে ‘রাঢ়’, শব্দটির ব্যবহার আছে কবিকঙ্কণ মুকন্দের ‘চণ্ডীমঙ্গলে’ (ষোড়শ শতক) ‘অতি নীচ কুলে জন্ম
জাতিতে চোয়াড়। কেহ না পরশ করে লোকে বলে রাঢ়।।” প্রাচীন বাংলার আর একটি অর্থবহ নাম ছিল ‘গৌড়’। রামমোহন থেকে
রবীন্দ্রনাথ পর্যন্ত ‘গৌড়’ শব্দটিকে ‘বঙ্গ’ শব্দের সমান্তরাল ও সমার্থক বলে মনে করতেন। রামমোহনের ‘গৌড়ীয় ভাষার ব্যাকরণ’
মধুসূদনের ‘গৌড়জন’ এবং রবীন্দ্রনাথের ‘গৌড়ানন্দ কবি’ প্রভৃতি পদের ব্যবহার এ সত্য সমর্থন করে।
কিন্তু গৌড়দেশ বলতে
বোধ করি বৃহত্তর বাংলা দেশের একটি অংশকে বোঝালেও তা সমগ্র বাংলা দেশের প্রতিনিধিত্ব করে না। এ সম্পর্কে ‘বাঙ্গালা সাহিত্যের
ইতিহাস’-প্রণেতা ও ভাষাচার্য সুকুমার সেনের মন্তব্য প্রণিধানযোগ্য-” ‘গোল্ড’ এই জাতিবাচক নামের সঙ্গে গৌড়’ নামের যোগ থাকা সম্ভব।
গোঁড়দের দেশ গৌড়: বাংলা দেশের পরিচয়
“পঞ্চগৌড়” কথাটি হইতে মনে হয়, উত্তর ভারতের একাধিক অঞ্চল একদা গৌড় নাম পাইয়াছিল। ষষ্ঠ শতাব্দের পূর্বেই বাঙ্গালা দেশের
উত্তর অংশের স্থান ও শহর বিশেষ এই নামে প্রসিদ্ধ হয়। শশাঙ্কের “গৌড়রাজ” খ্যাতি তাহার প্রমাণ। গৌড়দেশের লোক বুঝাইতে
রাজশেখর (নবম শতাব্দ) “গৌড়” শব্দ ব্যবহার করিয়াছেন। শ্রীচৈতন্যের সময়ে বাঙ্গালী জাতি বাঙ্গালার বাহিরে ‘গৌড়িয়া’ নামে পরিচিত
ছিল। সংস্কৃত অলঙ্কার শাস্ত্রের গৌড়ী রীতি এবং প্রাকৃত ব্যাকরণের গৌড়ী (ভাষা) মোটামুটিভাবে বাংলা দেশকেই নির্দেশ করিতেছে।