শীতে মুরগীর যত্ন ও রোগ প্রতিরোধে করণীয়: এই শীতে কিভাবে আপনার বাড়ির পোষা মুরগী বা খামারের পোলট্রি মুরগীর যত্ন
নিবেন বা রোগ বালাই কিভাবে প্রতিরোধ করবেন তা জানতে পড়ুন আজকের এই লেখা।
বাসস্থান:
শীতকালে বয়সভেদে মুরগির ঘরের ভেতরের পরিবেশ ঠিক করতে হবে। যে বয়সের মুরগি পালন করা হবে সে বয়সের মুরগির জন্য ঘরে
উপযোগী পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। ঘরের আশপাশের ঝোপ – জঙ্গল কেটে পরিস্কার করতে হবে, যাতে দিনের আলো পরিপূর্ণভাবে
ঘরের চালার ওপর পড়ে। ঘরের দরজা- জানালার ফাঁকা বন্ধ করে দিতে হবে যাতে ঠাণ্ডা বাতাস ঘরে প্রবেশ করতে না পারে। মুরগির ঘরে উপযোগী পরিবেশ তৈরিতে নিচের বিষয়গুলো নিশ্চিত করতে হবে।
লিটার:
শীতকালে লিটার হিসেবে ধানের শুকনা তুষ সবচেয়ে ভালো। তুষ মুরগিকে গরম রাখে। ব্রুডার হাউসে পাঁ-১০ সেন্টিমিটার পুরু করে
লিটারসামগ্রী বিছাতে হবে। মুরগি যদি ফ্লোরে পালন করা হয়, তাহলে বড় মুরগির জন্য লিটারের পুরুত্ব চার ইঞ্চির কম হবে না।
লিটারসামগ্রী হতে হবে পরিচ্ছন্ন ও দূষণ মুক্ত। কোনো কারণে পানি পড়ে লিটার ভিজে গেলে ভিজা লিটার ফেলে ওই স্থানে শুকনা লিটার
বিছতে হবে। রিটার যেন খুব শুকনা ধুলাময় না হয়।
তাপমাত্রা: শীতে মুরগীর যত্ন
শিতকালে মুরগি পালনে সবচেয়ে বড় সমস্যা তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রনে রাখা। মুরগির ঘবে স্বাভাবিক তামমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা। মুরগির ঘরে
স্বাভাবিক তাপমাত্রা দরকার ৬৫-৭৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যখন পরিবেশের তাপমাত্রা খুব বেশি কমে যায়, তখন ব্রুডারে বাল্ব সংখ্যা বাড়িয়ে
দিতে হবে। ঘরের চালা টিনের হলে হার্ডবোর্ড জাতীয় পদার্থ দিয়ে সিলিং দিতে হবে। ঘর উষ্ণ রাখতে টিনের বা ছাদের ওপর খড় বিছিয়ে
দিতে হবে। ঘরে বাতাস চলাচালের ব্যবস্থা থাকতে হবে। ব্রুডিং পিরিয়ডে বাচ্চা যাতে সমভাবে তাপ পায় এ জন্য ৫০০ জন্য ১০০ ওয়াটের
তিনটি বাল্ব সংযুক্ত একটি ব্রুডার হার্ডবোর্ড বা প্লেনশিট দিয়ে তৈরি চিকগার্ডের মধ্যে স্থাপন করতে হবে।
আলো:
মুরগির ঘরে আলো এমন ভাবে দিতে হবে যেন তা ঘরে সমভাবে ছড়িয়ে পড়ে। ব্রুডিং পিরিয়ডে প্রথম তিন দিন নিরবিচ্ছিন্ন আলো
দরকার
বাচ্চার ঘনত্ব: শীতে মুরগীর যত্ন
ব্রুডার হাউসে প্রতি বর্গমিটারে প্রথমে ৫০ টি বাচ্চা রাকতে হবে এবং চার দিন বয়সের পর থেকে ক্রমান্বয়ে জায়গা বাড়িয়ে দিতে হবো। ১৪
দিন বয়সের পার ঘরের তাপমাত্রা ঠিক রেখে বাচ্চা যাতে পুরো ঘরে বিচরণ করতে পারে সে অনুযায়ী জায়গা বাড়াতে হবে। ডিমপাড়া
মুরগির শরীরের তাপমাত্রা ঘরের তাপকে কিছুটা প্রশমিত করলেও উৎপাদনের জন্য এটা ভালো নয়। তাই ঘরে মুরগির ঘনত্ব কেমন হবে
তা নির্ভর করবে ঘরের ধরন, ব্যবহৃত সরঞ্জামাদি, মুরগির বয়স, জাত ও পালন পদ্ধতির ওপর, পরিবেশের তাপমাত্রার ওপর নয়।
ভেন্টিলেশন:
মুরগির ঘরে ভেন্টিলেশন ব্যবস্থা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ভেন্টিলেশন ব্যবস্থা বাতাস প্রবাহের মাধ্যমে ঘরে উৎপন্ন বিষাক্ত বাতাস বের করে দেয়
এবং বিশুদ্ধ বাতাস প্রবেশে সহায়ক ভূমিকা পালন করে । শীতকালে ঘরে ঠাণ্ডা বাতাস যাতে প্রবেশ করতে না পারে সে জন্য সব দরজা-
জানালা বন্ধ রাখলেও ভেন্টিলেশন ব্যবস্থা অবশ্যই চালু রাথতে হবে।
খাদ্য:
শীতকালে ঠাণ্ডা আবহাওয়ায় মুরগি খাবার, বেশি খায়। অতিরিক্ত খাবার খেঅেয় শরীরে তাপ উৎপাদন করে। অর্থাৎ শীতকালে শরীরে
বেশি ক্যালরি দরকার হয়। এ জন্য রেশনে শর্করা – চর্বি উৎপাদনের উৎস কিছুটা বাড়িয়ে দিতে হবে। তবে রেশনের সব খাদ্য উপাদানের
পরিমাণগুলো ঠিক রেখে কিছু পরিমাণ তেল মিশিয়ে ক্যালরির পরিমাণ বাড়ানো যায়। ব্রুডিং অবস্থায় প্রথম তিন দিন লিটারের ওপর চট বা
কাগজ বিছিয়ে তার ওপর খাদ্য ছিটিয়ে দিলে ভালো হয়। বাচ্চা মুরগিকে বারবার অল্প অল্প খাবার দিতে হবে ফলে খাবার খাওয়অর প্রতি
আগ্রহ তৈরি হবে। শীতকালে সব বয়সের মুরগির উৎপাদন (গোশত, ডিম) কমে যায়। তাই সরবরাহকৃত খাবারে পর্যাপ্ত পুষ্টি উপাদান থাকা
নিশ্চিত করতে হবে।
পানি:
মুরগি যা খাবার গ্রহণ করে তার দ্বিগুণ পানি পান করে । তবে শীতকালে ঠাণ্ডার কারণে পানি গ্রহণের পরিমাণ কম হয় । তাই পানি
গ্রহণের পরিমান ঠিক রাখতে প্রচণ্ড শীতের সমকয় সকালে ঠাণ্ডা পানি না দিয়ে হালকা গরম দিতে হবে। পানি ভরার আগে পাত্র
ভালোভাবে পরিস্কার করতে হবে।
ভ্যাকসিনেশন:
সঠিক খামার ব্যবস্থাপনার জন্য একটি ভ্যাকসিনেশন কর্মসূচি প্রণয়ন করতে হবে। ব্রয়লারের জন্য রানিক্ষেত এবং গামবোরো এই দুটি
ভ্যাকসিনই যথেষ্ট, তবে ব্রিডার খামারের জন্য স্পুর্ণ ভ্যাকসিনেশন কর্মসুচি অনুসরণ করতে হবে। শীতকালে পরিবেশের তাপমাত্রা কমে
যাওয়ার কারণে বিশেষ করে এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা ও রানিক্ষেত রোগ সংক্রমণ বেড়ে যোতে পারে। ধারণা করা হায়, রানিক্ষেত রোগ
প্রতিরোধ করার মাধ্যামে এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা সংক্রমণ কমানো যায়। এ জন্য সময়মতো রানিক্ষেত রোগের ভ্যাকসিন দিতে হবে।
জীবাণুনাশক স্প্রে:
শীতকালে পরিবেশের তাপমাত্রা কমে যাওয়ার কারণে এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জার প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়, তাই বাণিজ্যিকভাবে গড়ে ওঠা
খামারের আশপাশে ১০০ গজের মধ্যে প্রতিদিন জীবাণুনাশক স্প্রে করতে হবে। মুক্ত পরিবেশে ছেড়ে পালন করা মুরগি যাতে খামারের
সংস্পর্শে না আসে এটা খেয়াল রাখাতে হবে এবং ওই সব মুরগির নিয়মিত টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। কারণ ওই সব মুরগি
থেকেই ইভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা সংক্রমণের আশঙ্কা বেশি থাকে।
মিডিকেশন: শীতে মুরগীর যত্ন
শীতকালে রানিক্ষেত, মাইকোপ্লাজমা প্রভৃতি রোগের বিস্তার বেশি ঘটে। রোগাক্রান্ত হওয়ার প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ শনাক্তপুর্বক চিকিৎসা দিতে হবে। তা ছাড়া শীতের কারণে রোগ প্রতিরোধ সামর্থ্য কমে যাওয়া নিরাময় দুরূহ হয়ে পড়ে